বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

'সখী, ভালোবাসা কারে কয়'

 

আচ্ছা, বলুন তো ভালোবাসা ব্যাপারটি আসলে কি? প্রচুর পরিমাণ মানুষ প্রায়ই এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করেন। এর উত্তর কিন্তু মোটেই সহজ নয় বরং পরিষ্কার ভাবে চিন্তা করতে গেলে ভাবনাগুলো জট পাকিয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি। 'ভালোবাসা' নামক বিষয়টি নিয়ে নানান সময়ে অসংখ্য গুণীজন প্রচুর পরিমাণ হিসাবনিকাশ করেছেন, অনেক থিওরীও বের করেছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও স্পষ্ট করে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। অনেকেই বলে থাকেন ভালোবাসা একটি মানসিক অনুভূতির নাম। এটা একান্তই নাকি মনের মধ্যে আবদ্ধ। আচ্ছা, মন বিষয়টি আসলে কি? এর একটাই উত্তরঃ মস্তিষ্ক-ই হচ্ছে মন। মানুষের যাবতীয় আবেগ-অনুভূতির একমাত্র নিয়ন্ত্রক হলো মস্তিষ্ক। মানুষের ব্রেইনের টেম্পোরাল লোবে ভালোবাসা বাস করে। টেম্পোরাল লোবে অসংখ্য নিউরোনের ভেতর দিয়ে ইলেকট্রিক ইম্পালসের বিশেষ ধরনের আদান-প্রদানই ভালোবাসা। কিন্তু কেউ কেউ আবার অন্য ভাবে বলে থাকেন যে- মানুষের আবেগ-অনুভূতি এবং ভয়ভীতির মুল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে পিটুইটারী গ্লান্ড। একটি মেয়ে যখন একটি ছেলের প্রেমে পড়ে, তখন ছেলেটিকে দেখামাত্রই তার পিটুইটারী গ্লান্ড থেকে বিশেষ একধরণের এনজাইম নিসৃত হয় এবং সেই এনজাইমের কারনেই ছেলেটি তখন যা করে, তা দেখেই মেয়েটির হৃদয়ে দোলা লাগে।

এবারে আসুন, একেবারে মুল জায়গায় যাওয়া যাক। অসংখ্য বিজ্ঞানীরা একবাক্যে বলেছেন- প্রকৃতির প্রধান ইচ্ছা এই জীবজগৎ যেন টিকে থাকে। জীবজগতের কোন বিশেষ ধারা যেন বিলুপ্ত না হয়। আমাদের এই পার্থিব জীবজগতের একটি প্রধান ধারা হচ্ছে হোমোস্যাপিয়েন্স বা মানবজাতি। এই মানবজাতিকে টিকিয়ে রাখার পূর্বশর্ত হলো তাদের সন্তান উৎপাদন করা এবং অতি অবশ্যই উৎকৃষ্ট সন্তান উৎপাদন করা। সন্তান সৃষ্টির জন্য একজন মানব এবং একজন মানবীকে পরস্পরের খুব কাছাকাছি আসতে হয়। এই কাছাকাছি আসার প্রক্রিয়াটির জন্য তাদের একজনের অপরজনের প্রতি একটি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ তৈরি হতে হয়। এই শারীরিক আকর্ষণের মুল রূপটির নাম-ই ভালোবাসা। সময় বিশেষে এই ভালোবাসার তীব্রতারও হেরফের হয়। প্রকৃতি যখন বুঝতে পারে দুজন বিশেষ মানব-মানবীর মিলনে উৎকৃষ্ট সন্তান তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, তখন প্রাকৃতিক ভাবেই উক্ত মানব-মানবীর মধ্যকার ভালোবাসা তীব্রতর হয়। তারা একে অপরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে এবং কোন বাঁধা-ই তাদের কাছে তখন বাঁধা বলে মনে হয় না। পুরুষেরা রূপবতী মেয়েদের প্রেমে পড়ে, কারণ প্রকৃতি চায় পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুন্দর হয়। যুগে যুগে নারীরা গুণী পুরুষদের প্রেমে পাগল হয়েছে, কারণ প্রকৃতি চেয়েছে পুরুষদের গুণ যেন পরবর্তী প্রজন্মে ডিএনএ-র মাধ্যমে প্রবাহিত হয়। প্রকৃতি সবসময়ই চেয়েছে মানব সম্প্রদায়ের গুণগুলো যেন প্রবাহিত হতে হতে একটি সময় পূর্ণ মাত্রায় বিকাশ লাভ করে, যেন তৈরি হয় একটি অসাধারণ মানবগোষ্ঠী।
এটাই হচ্ছে মুল বিষয়। অথচ শৈশব থেকেই দেখে এসেছি এই ভালোবাসা নিয়ে মানুষের মধ্যে সে কি সীমাহীন আদিখ্যেতা! ভালোবাসার জন্য কতোই না পাগলামি করা হয়। গল্প-উপন্যাস কিংবা চলচ্চিত্রের কাহিনির মধ্যে অতি অবশ্যই একজন নায়ক থাকে, সে যখনই তার নায়িকা কে পেয়ে যায় কাহিনী ওখানেই সমাপ্ত করা হয়। নায়ক নায়িকাকে পেয়ে যাবার পর কি হয়, সেটা তো সবাই বোঝে! অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে থাকে। তারমানে নিজের প্রজাতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার স্বার্থে বিপরীত লিঙ্গের একজন মানুষের সাথে জৈবিক সম্পর্ক স্থাপন করাকেই বাহুল্য করে ভালোবাসা বলা হয়। এই তুচ্ছতম বিষয়টির জন্য মানুষ সীমাহীন উদ্যমে কবিতা-গান লেখে, রাত জেগে কল্পনার আকাশে ডানা মেলে, অনেকে নিজেকে পাল্টে ফেলে, পরিবার কিংবা সমাজ ত্যাগ করে, কখনও নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়। আর ভালোবাসা না পেলে কেঁদেকেটে একাকার করে, হাত-পা কাটে, নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে, কেউ কেউ তো আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। আহারে... ভালোবাসার কি ঠ্যালা! কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, আমি এখনও পর্যন্ত এই অসাধারণ বিষয়টি ঠিকঠাক ভাবে বুঝে উঠতে পারলাম না। তাই মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে, কোন একজন নারীর কাছে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করি-
'সখী, ভালোবাসা কারে কয়?'

কৃষ্ণেন্দু দাস/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

'দানে দানে তিন দান'

সেই আশির দশকের সূচনালগ্ন থেকেই নিজস্ব অবস্থান থেকে আমি আমার চোখে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিলাম, এখনো পর্যন্ত নিশ্চলভাবে দেখে যাচ্ছি ...