“হ্যাপি নিউ ইয়ার”
ডিসেম্বর শেষের সেই ক্লান্তিকর আর চরম একঘেয়েমির মাঝে কাটানো সারাটা বিকেল, যেখানে তৃপ্তি বলতে শুধুমাত্র চায়ের কাপে তৃষিতের মত চুমুক দিয়ে সামান্য একটু উষ্ণতা খুঁজে নেওয়া। এই তো সব, কী দরকার এত বেশি ব্যতিক্রমতার বেড়াজালে নিজের পরিনত, বয়স্ক মনটাকে লাগাম পরাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে? জীবন তো থেমে নেই, এই তীব্র শীতের মাঝেও থেমে থাকেনা সে কখনও। কখনও সে অভিজাত পাড়ার বার কাম ক্লাবে হুইস্কির গ্লাসে ঠিকরে পড়া হ্যালোজেনের মদিরতা কিংবা কখনও ফুটপাতের পাশে লাইটপোষ্টের নীচে’র ক্ষুদ্র দোকানে ভাপা পিঠের মধ্যকার গরম ধোঁয়া। চলমান ব্যাস্ততার ধারাবাহিকতায় কখনও কখনও আমরা তাকে খানিকটা ব্যতিক্রমতার রঙ্গীন কাগজে মুড়ে নিয়ে একটু অন্যভাবে দেখতে ভালবাসি। তবে আক্ষরিক অর্থে তো সবই এক, এক এবং অদ্বিতীয় আর অবিকৃত। কারণ সেই একই নিয়মে চলে যায় সবকিছু, মানুষ জন্ম নেয়, ধীরে ধীরে বড় হয়, স্বপ্ন আর বাস্তবের দোলাচলে দীর্ঘ সময় পাড়ি দিয়ে একসময় হয় বৃদ্ধ। তারপর, সেই অমোঘ নিয়তি যার থেকে নিস্কৃতি নেই। অর্থাৎ মৃত্যুর কোলে চীরনিদ্রায় ঘুমিয়ে পড়া। সবকিছু তো এভাবেই প্রোগ্রাম করাই রয়েছে অসীম ক্ষমতাধর একজনের দ্বারা। তাই তো শীত চলে যায়- আসে বসন্ত, রাতের আঁধার কেটে গিয়ে উদ্ভাসিত হয় নতুন সূর্যালোক, ডিসেম্বর শেষ হয়ে আসে আবার এক অদেখা জানুয়ারি, আসে নতুন একটি বছর। সেই বছরটিকে আরো একটু গতিশীলতা কিংবা নতুনত্বে সাঁজিয়ে তুলতে সবার হৃদয় টানটান করে উত্তেজনায়। সত্যিই কী অদ্ভূত বিচিত্র এই মানব জীবন! কত সরল এই জীবনের পরিব্যাপ্তি, গভীরভাবে একটু চিন্তা করলেই মনেহয় যেন ভীষণ অর্থহীন আর ছেলেমানুষি এইসব। তবুও যে বেঁচে আছি, আর বেঁচে থাকা মানেই নিজের মনকে নিত্যদিন অদেখা সুন্দর সুন্দর সব স্বপ্ন দেখানো। নিজের সাথেই এক প্রকারের লুকোচুরি লুকোচুরি খেলা, যে খেলার ফলাফল জেনেও না জানার ভান করে একটু কল্পনাবিলাশী হওয়া, সচারচর মিথ্যেভাষণে নিজেকে ডুবিয়ে রেখে হাসি হাসি মুখে বলা- এই তো ভাই, ভালোই আছি। আপনি ভালো তো?
বাই দ্য্ ওয়ে- “হ্যাপি নিউ ইয়ার”...!!
© কৃষ্ণেন্দু দাস/
(পুরনো দিনের নোটবুক থেকে)