...সোস্যাল মিডিয়ার সঙ্গে বেশ ভালোভাবে যুক্ত আছি; তা বলতে গেলে প্রায় আটটি বছর তো হবেই। আট বছর মোটামুটি ভাবেই বেশ দীর্ঘ একটি সময়। অন্তত আট বছরে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর দিকে একটু ভালোভাবে নজর দিলে অনেক বিষয়ই বেশ প্রকটভাবে ধরা পড়ে। বিশেষ করে একটি দীর্ঘ সময়ের মাঝে অবস্থানকারী সমাজের নানা বয়সের, নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের দৈনন্দিন জীবনচর্চা থেকে শুরু করে একটি দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট কিংবা একটি নব্য প্রজন্মের বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সহ আরও অনেক বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে, যদি নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে একটু পর্যবেক্ষণ করা যায়। এত লম্বা কথায় না যাই বরং, কারণ লক্ষ্য করেছি ইদানীং মানুষ দীর্ঘ আলোচনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যাইহোক, বর্তমানে সমাজের বৃহত্তর একটি অংশই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে খুব ভালোভাবেই যুক্ত। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মানুষের আধিপত্য এইসব অঙ্গনে প্রায় আকাশস্পর্শী! যাদের খুব বড় একটি অংশই মুলতঃ একে অপরকে অনুকরণ করে বেঁচে আছে। শুনতে একটু অবিশ্বাস্য শোনালেও, এই অংশটির মাঝে সত্যিকার অর্থেই নিজস্বতার প্রচন্ডরকম ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। যেমনঃ কেউ একজন একটি উদ্ভট শব্দ বললো; তো সাথে সাথেই সেই শব্দটি সবার মুখে মুখে ফিরছে। কেউ উদ্ভট কিছু একটা করলো; ওমনি সেটা করতেই সবার মধ্যে কি সীমাহীন এক প্রচেষ্টা! সবচেয়ে যে বিষয়টি এখন প্রায় মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি হলোঃ সংবাদ পরিবেশন। প্রায় প্রত্যেকেই এক একজন নিখুঁত সংবাদকর্মী! ধরা যাক, দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। সাথে সাথেই সবার টাইমলাইনে সেই ঘটনা ঘুরতে থাকবে। ঘটনার গুরুত্ব যাই হোক না কেন, কিংবা এর প্রতিকারে কি কি করা সম্ভব সেইসব নিয়ে ভাবার কিংবা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দুই লাইন লেখার মতো মানুষ বিলুপ্তপ্রায়। অথচ, কিছু একটা হোক; সঙ্গে সঙ্গেই সেই একই কথা সর্বত্র ভেসে বেড়াতে থাকে। যেন বিদঘুটে এক ব্রডকাস্টিং! কিন্তু এসব কেন? দেশে কি নিউজ পোর্টাল নেই? আছে, এবং প্রচুর পরিমাণেই আছে। অমুক নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, তমুক নিউজ ডট টিভি এসব তো ব্যাঙের ছাতার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সমগ্র ভার্চুয়াল জগত জুড়ে। তবুও কেউ কিছু একটা শুনলো তো সাথে সাথেই 'হুক্কা হুয়া' ডাক ছেড়ে দুনিয়াকে জানাতে হবে! আরে ভাই, তুই যেটা শুনেছিস সেটা অন্যেরাও শুনেছে। কারণ যে মাধ্যমে তুই ঘোরাঘুরি করিস, বাকীরাও তো সেখানেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। জানিনা, এইসব নির্বুদ্ধিতা আরো কতকাল যাবৎ টেনে নিয়ে যাবে এই ভারবাহী শ্রেণীটি! ভাবলে একটু অবাকই লাগে, এই মানুষগুলোর প্রত্যেকেরই রয়েছে একটি দুর্দান্ত সৃজনশীলতা সম্পন্ন উন্নত মস্তিষ্ক। চেতনার জায়গায় এই মানুষগুলোই প্রত্যেকেই এক একজন নিখুঁত শিল্পী! অথচ, সাধারণ বিচার বুদ্ধি খুইয়ে তারা সবাই এখন ঝাঁকের কৈ। কোন এক পাগল হুট করে বলে বসলো "বাবু, খাইছো?" সাথে সাথে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল সবার মগজের নিউরনে নিউরনে। সবাই সমবেত গলায় হাক ছাড়লো, "বাবু, খাইছো!" আরে ভাই, আমি বলছি শুনুনঃ বাবু খাইছে, বেশ ভালোভাবেই খাইছে। কতটা খাইছে তা এখন বুঝতে পারছেন না। বুঝবেন আগামী দুই কি তিন যুগ পরে, যখন আপনার চারপাশে বুদ্ধিহীন এক বিকৃত মানসিকতার প্রজন্ম ক্রমাগত ঘোরাঘুরি করবে!"
© কৃষ্ণেন্দু দাস/