বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০

টানের অসমাপ্ত রহস্য

 "টানের অসমাপ্ত রহস্য"


....এমন একটা সময় ছিলো যখন খুব করে ভাবতাম- জীবনের অর্থ আর এর উদ্দেশ্য নিয়ে, স্বপ্ন দেখতাম একটি বদলে যাওয়া সমাজের জন্য। আর এখন, জানিনা ঠিক কেন, এখন কোন স্বপ্ন টপ্ন দেখতে ইচ্ছে করেনা। বর্তমানে অধিকাংশ সময় ধরে অদ্ভুত একটি বিষয় নিয়ে খুব গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করি। বলা বাহুল্য ভাবনার বিষয়টি খানিকটা ছেলেমানুষী; তবে এটা যে মোটেই হেলাফেলা করার বিষয় না এটুকু সত্যি। বিষয়টি হলো একধরণের আকর্ষণ কিংবা সহজ কথায় বলতে গেলে 'টান'! আচ্ছা, এই টানের উৎস কোথায়? যে টানে অথর্বের মত আটকে পড়ে আছি চার দেয়ালের এক আবদ্ধ কুঠুরিতে! যে টানের কাছে জীবন মৃত্যুকে মুহূর্তেই তুচ্ছ জ্ঞান করি, যে টানের আবর্তে শত সহস্র সংঘাত মোকাবিলা করেও বেঁচে থাকে মানুষ, বেঁচে থাকে সমস্ত প্রাণীকুল। আচ্ছা, একটু বরং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গিয়ে দেখি তারা কি বলেন-

মডার্ন থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স বলেঃ পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ হল পরমাণু। আর পরমাণু কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে তার ঠিক মাঝখানে রয়েছে নিউক্লিয়াস, আর নিউক্লিয়াসের চারপাশে অনবরত ঘুরে চলছে ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন। এই অদ্ভুত পদ্ধতিটার নাম- থার্মোনিউক্লিয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী ঠিক যেভাবে নিউক্লিয়াস কে কেন্দ্র করে ঘুরে চলেছে ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন, সেই একই রকম পদ্ধতিতে আমাদের সৌরজগতে সূর্য ও ঠিক নিউক্লিয়াসের ভূমিকায় থেকে তার চারপাশের গ্রহ আর উপগ্রহ গুলোকে টেনে রেখেছে গ্র্যাভিটি নামক এক অদৃশ্য টানে। আবার এই গ্র্যাভিটির টানেই এই পৃথিবীর উপরিভাগে বসবাস রত প্রানীকুল আটকে রয়েছে পৃথিবীর বুকে। যদি সমগ্র ইউনিভার্স সম্পর্কে বলা যায়- সেখানেও দেখা যাবে অদৃশ্য টানে প্রতিটি গ্যালাক্সি পরস্পরের সাথে সংঘর্ষ না ঘটিয়েই সুষম ভাবে পাশাপাশি অবস্থান করছে। অনেকটা একটি মা মুরগীকে ঘিরে ছানারা যেভাবে বিচরণ করে, ঠিক তেমনই। আমাদের পৃথিবীর উপরিভাগে ওজোনস্তরের বাইরে যে নিকষ কালো বায়ুহীন মহাশূন্য রয়েছে, তার চেয়েও দূরে যেসব স্পেস, সেখানে ওৎ পেতে রয়েছে অসংখ্য ব্লাকহোল(কৃষ্ণ-গহবর), যারাও প্রতিক্ষণে নীরবে-নিভৃতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে কত শত উজ্জ্বল নক্ষত্রকে তার অন্ধপূরীর মাঝে। তবে কোথায় নেই এই টান!

আচ্ছা, যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কথা বলা হয়- তবে তিনিও তো টেনে রেখেছেন তাঁর সমগ্র সৃষ্টি কে একান্ত  নিজের চারপাশে। সার্বিক ভাবে দেখা যায়ঃ মানুষ যে বাস্তবিক জীবনে বেঁচে থাকতে চায়, সেই বেঁচে থাকাটুকুও কিন্তু নানামুখী টানের জন্যে। কেউ অর্থের টানে, কেউ সামাজিক প্রতিষ্ঠা কিংবা খ্যাতি অর্জন করার টানে, কেউ মানব কল্যাণের টানে, কেউ দ্বায়িত্ব বোধের টানে, আর কেউ কেউ তো স্রেফ জীবনটাকে চমৎকার ভাবে উপভোগ করার টানে। আমি আর কিছু ভেবে কোন কূল পাইনা, এই টানের শেষ কোথায়?

তবে কি মৃত্যুই এই যাবতীয় টানের পরিসমাপ্তি নিয়ে আসে? নিশ্চয়ই না, কারণ ঐ মৃত ব্যক্তির প্রতিও তার আপন মানুষেরা টান অনুভব করে। তাই সবকিছুর শেষে সার্বিক দৃষ্টিতে আমার মাথায় যেটা আসে তা হলোঃ 'জীবনের সব উদ্দেশ্যই নিহিত আছে একটা রহস্যময় টানের মাঝে', যে টানের কোন সমাপ্তি নেই! 

© কৃষ্ণেন্দু দাস/

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

'দানে দানে তিন দান'

সেই আশির দশকের সূচনালগ্ন থেকেই নিজস্ব অবস্থান থেকে আমি আমার চোখে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিলাম, এখনো পর্যন্ত নিশ্চলভাবে দেখে যাচ্ছি ...