সোমবার, ১১ মার্চ, ২০২৪

'আত্মতত্ত্ব'

 সৌরজগতের এই তৃতীয় গ্রহটিতে যেদিন সর্বপ্রথম প্রাণের স্পন্দন শুরু হয়েছিল, সেই প্রাচীণ সময় থেকে শুরু করে আজকের এই দিন পর্যন্ত পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীদের অনেক কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হয়েছে। জলবায়ুগত কারণ এবং অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার স্বার্থে অসংখ্য প্রাণী নিজেদের নানান ভাবে বিবর্তিত করে তাদের অস্তিত্ব দীর্ঘদিন ধরে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, আবার বিশাল সংখ্যক প্রাণী এই পৃথিবী থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পৃথিবীতে প্রাণীদের জন্যে আদি ও অকৃত্রিম নিয়ম-ই হলো সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা।


'সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট' কথাটি দিয়ে বোঝানো হয়েছিল— যোগ্যতম দলই তাদের উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারে। মূল বিষয় হলো টিকে থাকাটা ভীষণ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হারিয়ে যাওয়া, ধ্বংস হয়ে যাওয়া, অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়া টাইপের বিষয়গুলো অনেকটা হেরে যাবার নামান্তর। হেরে গেলে বেশিদিন কেউ আর মনে রাখে না। জিতে যাওয়া কিংবা টিকে থাকাটাই হচ্ছে পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে নিজেকে জানান দেবার আদিমতম সত্য। পোস্টমডার্নিজমের এই মুহূর্তে এসে ভীষণ প্রকটভাবে একটি বিষয় চোখে পড়ে। বিষয়টি হলো— এখনকার দিনে মানুষ খুব অল্পতেই মারাত্মক রকম হতাশ। খুব আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করেছি যে, একেবারে সামান্য বিষয় নিয়েই মানুষ আজকাল নিজেকে শেষ করে দিতেও দ্বিধা করছে না। তারচেয়ে অবাক বিষয় হলো এই স্বেচ্ছামৃত্যুর পক্ষেও কেউ কেউ আজকাল যুক্তি দাঁড় করিয়ে বিষয়টিকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করে। কাউকে কাউকে এখন জোরেশোরে বলতে শুনি— নিজেকে নিজে ধ্বংস করে দেওয়া যার যার নিজস্ব ব্যক্তিস্বাধীনতা। এসব কুযুক্তির ওপরে দাঁড়িয়ে লাগামহীন ভাবে প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে স্বেচ্ছামৃত্যুর মিছিল। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল আসেনি, তাহলে সুইসাইড করতে হবে। ভালো ইন্সটিটিউশনে চান্স হয়নি, তাহলে সুইসাইড করতে হবে। চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে সুইসাইড করতে হবে। ভালোবাসার মানুষটি ছেড়ে চলে গেছে, তাহলে সুইসাইড করতে হবে। দাম্পত্য জীবনে অশান্তি হচ্ছে, তাহলে সুইসাইড করতে হবে। কেন রে ভাই, জীবন টা কি এতটাই বেশি ঠুনকো! অন্য রকম কিছু কি ভাবা যায় না? আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে না গিয়ে বরং নিজের ক্ষমতার ওপর আস্থা রেখে নতুন কিছু বের করার চেষ্টা করা যায় না?


আমরা মানুষেরা অত্যন্ত চিন্তাশীল প্রাণী। উদ্ভাবনী ক্ষমতার জন্যেই আমাদের আজকের বিকাশ। পাথরে পাথর ঘষে আগুন জ্বালানোর সেই আদিম যুগ থেকে আস্তে আস্তে নিজেদের উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আজ আমরা মহাকাশে পাড়ি জমাচ্ছি নতুন নতুন গ্রহের সন্ধানে। তাহলে সেই চমৎকার উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন একজন মানুষ হয়ে এই ধরণের হঠকারী সিদ্ধান্তের পেছনে কেন দৌড়াচ্ছি আমরা? আমাদের আবারও সেই পেছনের দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকাতে হবে। আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে নিজেদের মস্তিষ্কের ক্ষমতার ওপর। ছোটখাটো আবেগ-অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে। পৃথিবীতে একটি স্বতন্ত্র প্রাণী হিসেবে সেই আদিমতম সত্যটি মাথায় রাখতে হবে। তা হলো— সমস্ত প্রতিকূলতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই করে নিজেকে টিকিয়ে রাখা। কারণ একটি প্রাণী হিসেবে নিজের অস্তিত্বকে রক্ষা করার চেয়ে শ্রেষ্ঠতম বিষয় পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আর নেই। 


© কৃষ্ণেন্দু দাস ||

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

'দানে দানে তিন দান'

সেই আশির দশকের সূচনালগ্ন থেকেই নিজস্ব অবস্থান থেকে আমি আমার চোখে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিলাম, এখনো পর্যন্ত নিশ্চলভাবে দেখে যাচ্ছি ...