শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

"এলোমেলো ভাবনা"


একটা অদ্ভুত ব্যাপার নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে খুব করেই ভাবছি। বিষয়টা যে নিতান্তই হাস্যকর, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবুও এটাকে হেসে উড়িয়ে দিতে পারছিনা, বলেই এই লেখা। আমি যখন হুমায়ূন আহমেদের লেখা বই পড়া শুরু করি, তখন আমি ক্লাস নাইনের ছাত্র। আর “হিমু” ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়- যখন সবে কলেজে ভর্তি হলাম। তখনকার সময়ে আমার বয়েসী অনেক ছেলেকেই দেখেছি হলুদ পাঞ্জাবী পরে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করতে, সমস্ত সময়ই এই ব্যাপারটা আমার কাছে যথেষ্টই হাস্যকর মনে হয়েছে। তবে “হিমু” চরিত্রটি যে অসম্ভব রকমের আকর্ষনীয়; এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।  কারণ হুমায়ূন আহমেদ বলেছেনঃ হিমুর বাবা চেয়েছিলেন তার ছেলেকে মহাপুরুষ হিসাবে গড়ে তুলতে, যদিও কাজটি তার অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তবে হিমু যে অস্বাভাবিক ধরনের একজন মানুষ, তা এক বাক্যেই স্বীকার করে নিতে হয়। যাইহোক, মুল কথায় ফেরা যাক। তিন/চারদিন আগে আমার পরিচিত একজন আমাকে ডেকে নিয়ে বললঃ দাদা, আপনাকে একটা কথা বলি- "কথাটা সিরিয়াস", এরপর আমি তার সিরিয়াস কথা শুনে নিজেও বেশ সিরিয়াস ভাবে চিন্তিত হয়ে পড়েছি! সে বলেছিলো, আমি নাকি “হিমু” দ্বারা বিশেষ ভাবে প্রভাবিত। আর এই কারনেই আমার স্বাভাবিক জীবন ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরে একাকী বসে অনেক সময় নিয়ে ভেবেছি এই বিষয়টি নিয়ে। আসলেই কি তার কথা সত্য? হিমু বলতে আমরা যে চরিত্রটি'কে চিনি, তার আসলে প্রচলিত নিয়মে কোন কাজ নেই। তার কাজ হল রাস্তায় রাস্তায় হাঁটা-হাঁটি করা আর নানা প্রকারের অস্বাভাবিক কর্মকান্ডের দ্বারা মানুষকে বিভ্রান্ত করা। হিমুর টাকা-পয়সার প্রতি বিশেষ কোন মোহ নেই, আর সেই কারনেই সে কখনও কোন প্রকারের চাকুরী কিংবা অন্য কাজের সাথে যুক্ত হয়না।  তার পোষাক পরিচ্ছদও নিতান্ত ছাপোষা। কারন মহাপুরুষদের অর্থের প্রয়োজন নেই কিংবা তাঁদের পোষাক হতে হয় বাহুল্যবর্জিত। এছাড়া হিমু কখনও কোন নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়না, সে চীর ব্রক্ষ্মচারী পুরুষ, কারন সংসারের প্রতি মোহ থাকলে মহাপুরুষ হওয়া যায়না। হিমুর অনেক আত্মীয়-স্বজন কিংবা কাছের বন্ধুরা তাকে নিয়ে খুবই চিন্তিত থাকে। হিমুর থাকার জায়গাটা হতে হয় যথেষ্ট অপরিচ্ছন্ন আর এলোমেলো, যেকোন মানুষ হিমুর ঘরে গিয়ে চমকে উঠে ভাবে এখানে মানুষ থাকে কিভাবে? অথচ হিমুর এসব নিয়েও কোন চিন্তা ভাবনার অবকাশ থাকেনা। শহরের দাগী সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ফুটপাতের চা বিক্রেতা, রিক্সাওয়ালা,  ভিখারী কিংবা ভ্রাম্যমান পতিতা, সবার সাথেই হিমুর পরিচয় থাকে। হিমুর অন্যতম আর একটা উল্লেখযোগ্য কাজ হল পূর্নিমা রাত্রে জোৎস্না উপভোগ। এক কথায় বলা যায় তার জীবন যাপন পদ্ধতি খুবই বিচিত্র, আর সত্যিকার অর্থেই এই ধরনের মানুষের প্রতি সবারই এক ধরনের আগ্রহ থাকে। আমরা সমাজে প্রতিনিয়ত একঘেয়ে জীবন যাত্রা দেখে দেখে অভ্যস্ত, তাই হঠাৎ করে কিছু ব্যাতিক্রমতা আমাদের স্বভাবতই এক ধরনের ঘোরে আচ্ছন্ন করে। এটাই চীরায়ত দৃষ্টিতে আমাদের হিমু দর্শন। এখন নিজের কথা বলি- হ্যাঁ, অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে, আমিও প্রথাগত জীবন যাপন পদ্ধতির অনেকটা বাইরে থেকে থেকে অভ্যস্ত। যেমন আমার কোন টাকা-পয়সার প্রতি মোহ নেই, কোন বিশেষ খাবার অথবা পোষাক আমাকে টানেনা। আমার ব্যক্তিগত থাকার জায়গাটা ভীষন অগোছালো আর অপরিচ্ছন্ন থাকে, যেকোন সমস্যার কারনে এখনও পর্যন্ত আমি কোন চাকরী অথবা ব্যাবসার সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারিনি। হ্যাঁ, উটকো দার্শনিক টাইপের কথা বলে আমিও মানুষকে বিভ্রান্ত করে মজা পাই। সমাজের অতি নিম্নশ্রেনীর মানুষের সাথেও আমার এক ধরনের গভীর সখ্যতা আছে। আমি এখনও পর্যন্ত কোন নারীর সাথে নিজেকে জড়াইনি, আর আপতদৃষ্টিতে সংসার করারও কোন ইচ্ছে নেই। আর সবচেয়ে অবাক বিষয় হল- পূর্নিমার চাঁদের প্রতি আমি বিশেষ ভাবে দুর্বল। সবকিছু মিলিয়ে এক কথায় বলে দেওয়া যায় যে, আমি হিমুকে ফলো করতে করতে এমনটা হয়েছে। অথচ সত্যিটা আদৌ তা নয়। “হিমু” জাষ্ট আমার কাছে উপন্যাসের একটা চরিত্র মাত্র, যা হুমায়ূন আহমেদ স্যার অনেক যত্নে সৃষ্টি করেছেন। মহাপুরুষ হবার বাসনাও আমার নেই। যেটা আমার সাথে ঘটেছে তা নিতান্তই কাকতালীয়। তবে পুরো বিষয়টা গভীর ভাবে চিন্তা করে আমি সত্যিকার অর্থে “খাম্বিত” অর্থাৎ যাকে বলে স্তম্ভিত! 

(বিঃদ্রঃ স্তম্ভের অপর নাম খাম্বা, তাই স্তম্ভিত হওয়া মানেই খাম্বিত হওয়া- (হিমু)

© কৃষ্ণেন্দু দাস/

জুলাই, ২০২০ খ্রিঃ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

'দানে দানে তিন দান'

সেই আশির দশকের সূচনালগ্ন থেকেই নিজস্ব অবস্থান থেকে আমি আমার চোখে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেছিলাম, এখনো পর্যন্ত নিশ্চলভাবে দেখে যাচ্ছি ...