"ইনফার্নো এবং চলমান করোনা পরিস্থিতি"
অনেক দিন আগে ড্যান ব্রাউনের লেখা 'ইনফার্নো' বইটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আজ আবারও পড়লাম, এই উপন্যাসটি সত্যিই মাথা খানিকটা হলেও এলোমেলো করে দেয়। বিশেষতঃ ম্যালথাসের জনসংখ্যা বৃদ্ধি তত্ত্ব এবং তার থেকে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর পরিত্রাণ লাভের যে সংগতি উপস্থাপিত হয়েছে, সেটা সত্যিই অনবদ্য। তাতে হোক সেটা অসীম ক্ষমতাধর কোন অদৃশ্য মহাশক্তির অঙ্গুলিহেলনে কিংবা প্রাকৃতিক নিয়মে অথবা অতি প্রতিভাবান কোন মানুষের উদ্ভাবিত পন্থায়।
ম্যালথাসের তত্ত্বটি দুটি অনুমানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিতঃ
ক) মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের প্রয়োজন।
খ) নারী ও পুরুষের পারস্পারিক আকর্ষন ও সম্পর্ক অপরিবর্তনশীল।
ম্যালথাসের বক্তব্য হলোঃ স্ত্রী পুরুষের মধ্যে পারস্পারিক আকর্ষনে জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতি ২৫ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। অর্থাৎ খাদ্য শস্যের উৎপাদন যদি গানিতিক হারে বৃদ্ধি পায়, জনসংখ্যা তখন বৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে। তাহলে এর থেকে প্রতিকারের উপায় কি? শুনতে অত্যন্ত অমানবিক নিষ্ঠুর মনে হলেও এর সহজ প্রতিকার কিন্তু ঠিকই আছে। হ্যাঁ, এই সমস্যা থেকে ভবিষ্যতের পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে কোন একটি অদ্ভুত উপায়ে বিরাট সংখ্যক জনসংখ্যা কে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। সেটা হোক নিউক্লিয়ার ওয়েপন ব্যবহার করে কিংবা 'বিশেষ' কোন জীবাণুর সংক্রমণ ঘটিয়ে। অতঃপর যে জনসংখ্যা টিকে যাবে, তারাই আবার পৃথিবীর সাথে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এবারে আসা যাক গল্পের অংশে। ড্যান ব্রাউনের 'ইনফার্নো' উপন্যাসে দেখা যায় একজন বিপথগামী মেধাবী বিজ্ঞানীর গবেষণায় সৃষ্ট 'জোবরিস্ট' ভাইরাস এর বাহক হলো নিরীহ মানবগোষ্ঠী। মানবদেহের কোষে অনুপ্রবিষ্ট এই ভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মেধাবী বিজ্ঞানীদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায় নায়ক রবার্ট ল্যাংডন ইতালির ফ্লোরেন্সের একটি হাসপাতালের ঘরে জেগে ওঠার পর আবিষ্কার করেছিলেন যে তিনি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা- 'দ্য কনসোর্টিয়াম' এর লক্ষ্যবস্তু। তিনি এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকেন ফ্লোরেন্সে তিনি কী করছেন? তিনি এখানে কীভাবে এলেন? কে তাকে হত্যার চেষ্টা করছে? ইত্যাদি। তাকে বত্তিচেলি'লা মাপা হেল' 'ইনফর্নো' অবলম্বনে সৃষ্ট এই মানচিত্র বোঝাতে হবে। চিকিৎসক সিয়েনাসহ ক্লু উন্মোচন করার সাথে সাথে ল্যাংডন আবিষ্কার করলেন যে একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী বিশ্বের বেশি জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানের জন্য ইউরোপের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মুছে ফেলার এক অন্যতম ধ্বংসাত্মক দুর্ঘটনা "ব্ল্যাক ডেথ" এর মতন প্রচেষ্টা নিয়েছেন। তবে ধরা পড়ল যে বিজ্ঞানী আত্মহত্যা করেছেন এবং ভাইরাসটি অজানা স্থানে লুকিয়ে রেখে গেছেন। অবস্থানটির সংকেতগুলি দান্তে এবং ইনফার্নোর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত চিহ্নগুলির অনুক্রমের মধ্যে এনক্রিপ্ট করা হয়েছে, যা ল্যাংডন ক্রমান্বয়ে উন্মোচন করেন। কিন্তু তার আগেই 'জোবরিস্ট ভাইরাস' ছড়িয়ে যায় বিশ্বব্যাপী। বর্তমানের করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ও নিরীহ মানুষের মৃত্যুর সময়ে 'ইনফার্নো' আমাদের একটি বিষয়ে দারুণ ভাবে সাদৃশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে, তা হলোঃ ম্যালথাসের থিওরী অনুযায়ী পার্থিব জনসংখ্যার বিস্ফোরণ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করার জন্য প্রকৃতি কিভাবে তার সাম্যাবস্থা বজায় রাখে!
© কৃষ্ণেন্দু দাস/
২৯.০৪.২০২১ খ্রিঃ